বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:
অবশেষে বৃহস্পতিবার শেষে হচ্ছে পশ্চিমবাংলার বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ পর্ব। এদিন চার জেলার ৩৫টি আসনে ভোট গ্রহণ করা হবে। জেলাগুলি হল মালদা, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম এবং কলকাতা। নির্বাচনের শেষ পর্ব নির্বিঘ্নে করাতে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কলকাতা এবং রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি ভোট গ্রহণ কেন্দ্রগুলিতে মোতায়েন থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। শেষ দফায় মোতায়েন থাকবে মোট ৭৫৩ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। তবে বুথ পাহারায় থাকবে ৬৪১ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী।
এই দফায় বুথের নিরাপত্তা থেকে কোভিড বিধি বজায় রাখায়ও জোর দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কমিশন যেমন এই দফার ভোট শান্তিপূর্ণ এবং নির্বিঘ্নে করাতে চাইছে, তেমনই কোভিড বিধি মানার ব্যাপারে কোনও রকম আপস করতে চাইছে না তারা। এমনকী, ২ মে এই নির্বাচনের ফল ঘোষণা হবে। সেদিনও গণনা কেন্দ্রগুলিতে কড়া ভূমিকা নিয়েছে কমিশন। পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ নিয়ে এলে তবেই গণনা কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হবে রাজনৈতিক দলগুলির প্রার্থী এবং তাঁদের এজেন্টদের। যদিও বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে তৃণমূল। এই দফায় ভোট দেবেন ৮৪ লক্ষ ৯৩ হাজার ২৫৫ জন। পুরুষ ভোটদাতার সংখ্যা ৪৩ লক্ষ ৭০ হাজার ৬৯৩। মহিলা ভোটদাতার সংখ্যা ৪১ লক্ষ ২২ হাজার ৪০৩। মোট ১১ হাজার ৮৬০ বুথে ভোট গ্রহণ হবে।
বীরভূমে ভোট চলাকালীন যাতে কোনও প্রভাব খাটাতে না পারেন, তাই মঙ্গলবার তৃণমূলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত মণ্ডলকে নজরবন্দি করে কমিশন। সেই অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে রীতিমতো নাটক হয়ে গেল বুধবার। এদিন বেলা পৌনে বারোটা নাগাদ অনুব্রত মণ্ডল তাঁর বাড়ি থেকে বের হলে তাঁর গাড়িকে অন্য গাড়ি নিয়ে অনুসরণ করেন ম্যাজিস্ট্রেট এবং ৮ জন আধাসেনা। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে সকলের চোখে ধুলো দিয়ে উধাও হয়ে যায় অনুব্রতর গাড়ি। বিপাকে পড়ে যান স্বয়ং ম্যাজিস্ট্রেটই। শোরগোল পড়ে যায় প্রশাসনিক মহলে। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত তাঁকে নজরবন্দি করা হয়েছিল। তাঁকে এ ভাবে রাস্তায় হারিয়ে ফেলার পর তাঁর খোঁজ শুরু হয়ে যায় বোলপুরের বিভিন্ন জায়গায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাঁর সন্ধান মেলে তিনঘণ্টা পর।
জানা গিয়েছে, এই সময়ের মধ্যে অনুব্রত সাঁইথিয়ায় দলের কার্যালয়ে বৈঠক করেন। তার পর সেখান থেকে তারাপীঠে চলে যান মন্দিরে পুজো দিতে। আর সেখানেই তাঁকে খুঁজে পান নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিরা। তবে কমিশনের চোখে ধুলো দিয়ে যে ভাবে অনুব্রত বৈঠক করলেন এবং মন্দিরে পুজোও দিলেন, তা কমিশন এবং প্রশাসনকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। চার জেলাতেই এদিন মোতায়েন থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বীরভূমে ২২৪ কোম্পানি, মালদায় ১১০ কোম্পানি, মুর্শিদাবাদে ২১২ কোম্পানি এবং উত্তর কলকাতায় ৯৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা থাকছেন। এদিন যে ৩৫টি আসনে ভোট হবে, সেগুলির মধ্যে রয়েছে মালদার ৬টি আসন। সেই আসনগুলি হল মানিকচক, মালদা, ইংরেজবাজার, মোথাবাড়ি, সুজাপুর এবং বৈষ্ণবনগর।
রয়েছে মুর্শিদাবাদের ১১টি আসন। এই আসনগুলি হল খড়গ্রাম, বড়ঞাঁ, কান্দি, ভরতপুর, রেজিনগর, বেলডাঙা, বহরমপুর, হরিহরপাড়া, নওদা, ডোমকল এবং জলঙ্গি। বীরভূমের ১১টি আসনও রয়েছে। আসনগুলি হল দুবরাজপুর, সিউড়ি, বোলপুর, নানুর, লাভপুর, সাঁইথিয়া, ময়ূরেশ্বর, রামপুরহাট, হাসন, নলহাটি এং মুরারই। কলকাতার মধ্যে এদিন ভোটগ্রহণ হবে উত্তর কলকাতার আসনগুলিতে। আসনগুলি হল জোড়াসাঁকো, চৌরঙ্গি, এন্টালি, বেলেঘাটা, মানিকতলা, শ্যামপুকুর এবং কাশীপুর–বেলগাছিয়া। কলকাতার আসনগুলিতে এবার বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী লড়াই করছেন। চৌরঙ্গিতে তৃণমূল প্রার্থী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কংগ্রেস প্রার্থী সন্তোষ পাঠকের সঙ্গে। মানিকতলায় তৃণমূল প্রার্থী সাধন পাণ্ডেকে এবার কঠিন লড়াইয়ের সামনে ফেলে দিয়েছে বিজেপি প্রার্থী তথা প্রাক্তন ফুটবলার কল্যাণ চৌবের। এ কেন্দ্রে লড়াইয়ে রয়েছে সিপিএমের হেভিওয়েট প্রার্থী রূপা বাগচি।
শ্যামপুকুরে তৃণমূল প্রার্থী শশী পাঁজা। জোড়াসাঁকো কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী মীনাদেবী পুরোহিতের সঙ্গে লড়াই তৃণমূল প্রার্থী বিবেক গুপ্তার। বেলেঘাটায় তৃণমূলের শক্তিশালী প্রার্থী পরেশ পালের লড়াই এবার বিজেপি প্রার্থী কাশীনাথ বিশ্বাসের সঙ্গে। এন্টালি আসনে তৃণমূলের প্রার্থী স্বর্ণকমল সাহা। কাশীপুর–বেলগাছিয়া আসনে তৃণমূল প্রার্থী অতীন ঘোষ। তাঁর মুখোমুখি এবার বিজেপি প্রার্থী শিবাজী সিংহরায়। বীরভূমের বোলপুরে বিজেপি এবার প্রার্থী করেছে অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়কে। তাঁর বিপরীতে রয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী চন্দ্রনাথ সিনহা। নানুরে তৃণমূল প্রার্থী শ্যামলী প্রধান। ময়ূরেশ্বরে বিজেপি প্রার্থী শ্যামাপদ মণ্ডল। ডোমকলে সিপিএম প্রার্থী হেভিওয়েট আনিসুর রহমান।
মালদা এবং মুর্শিদাবাদকে কংগ্রেসের গড় বলে মনে করা হয়ে থাকে। সেখানে তৃণমূল কী রকম ফল করবে, তা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এবার বেশ চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। মালদায় মমতা সেই দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন কংগ্রেস থেকে আসা গনিখান চৌধুরির পরিবারের মেয়ে মৌসম বেনজির নুরের হাতে। এখন দেখার তিনি সেই দায়িত্ব কতটা সাফল্যের সঙ্গে পালন করতে পারেন!